ধূমকেতু আবিষ্কারের আকর্ষণীয় জগৎ অন্বেষণ করুন, প্রাচীন পর্যবেক্ষণ থেকে আধুনিক প্রযুক্তিগত অগ্রগতি পর্যন্ত, এবং আমাদের সৌরজগতে তাদের তাৎপর্য বুঝুন।
ধূমকেতু আবিষ্কার: মহাকাশ ও সময়ের মধ্য দিয়ে এক যাত্রা
ধূমকেতু, আমাদের সৌরজগতের সেই বরফময় পরিব্রাজকেরা, হাজার হাজার বছর ধরে মানবতাকে মুগ্ধ করে রেখেছে। পরিবর্তনের অগ্রদূত হিসেবে দেখা থেকে শুরু করে গভীর বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানের বিষয় হওয়া পর্যন্ত, ধূমকেতু আমাদের মহাবিশ্ব সম্পর্কে জ্ঞান গঠনে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। এই নিবন্ধটি ধূমকেতু আবিষ্কারের আকর্ষণীয় ইতিহাসে প্রবেশ করবে, আমাদের জ্ঞানের বিবর্তন এবং সেই প্রযুক্তিগুলো অন্বেষণ করবে যা আমাদের তাদের রহস্য উন্মোচন করতে সক্ষম করেছে।
অতীতের এক ঝলক: প্রাচীন পর্যবেক্ষণ
ধূমকেতুর পর্যবেক্ষণ প্রাচীনকাল থেকেই হয়ে আসছে। চীনা, গ্রীক এবং রোমানসহ প্রাচীন সভ্যতাগুলো এই মহাজাগতিক বস্তুগুলোর আবির্ভাব নথিভুক্ত করেছে। তবে, তাদের বোঝাপড়া প্রায়শই পৌরাণিক কাহিনী এবং কুসংস্কারে আচ্ছন্ন ছিল। উদাহরণস্বরূপ, কিছু সংস্কৃতি ধূমকেতুকে দেবতাদের বার্তাবাহক, সৌভাগ্যের অগ্রদূত বা আসন্ন দুর্যোগের প্রতীক হিসেবে দেখত।
- চীন: চীনা জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে ধূমকেতুর দৃশ্য meticulosly রেকর্ড করেছেন, যা তাদের পথ এবং চেহারা সম্পর্কে মূল্যবান তথ্য প্রদান করে। দুই হাজার বছরেরও বেশি সময় ধরে বিস্তৃত এই রেকর্ডগুলো আধুনিক জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের জন্য তথ্যের এক ভান্ডার।
- গ্রীস: অ্যারিস্টটল বিশ্বাস করতেন যে ধূমকেতু বায়ুমণ্ডলীয় ঘটনা, একটি ধারণা যা শতাব্দী ধরে প্রচলিত ছিল। তবে, সেনেকার মতো অন্যান্য গ্রীক চিন্তাবিদরা তাদের মহাজাগতিক প্রকৃতি স্বীকার করেছিলেন এবং তাদের পুনরাবৃত্ত আবির্ভাবের ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন।
- রোম: রোমান লেখকরা প্রায়শই ধূমকেতুকে জুলিয়াস সিজারের হত্যার মতো গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক ঘটনার সাথে যুক্ত করতেন, যা একটি উজ্জ্বল ধূমকেতু দ্বারা সূচিত হয়েছিল বলে বিশ্বাস করা হতো।
বৈজ্ঞানিক উপলব্ধির ভোর: টাইকো ব্রাহে থেকে এডমন্ড হ্যালি পর্যন্ত
বৈজ্ঞানিক বিপ্লব ধূমকেতু সম্পর্কে আমাদের ধারণায় একটি দৃষ্টান্তমূলক পরিবর্তন এনেছিল। ১৬ শতকের শেষের দিকে টাইকো ব্রাহের সুনির্দিষ্ট জ্যোতির্বিদ্যা পর্যবেক্ষণ প্রমাণ করে যে ধূমকেতু পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের বাইরে অবস্থিত, যা অ্যারিস্টটলের দীর্ঘদিনের বিশ্বাসকে চ্যালেঞ্জ করে। ১৭ শতকের গোড়ার দিকে প্রকাশিত জোহানেস কেপলারের গ্রহীয় গতির সূত্রগুলো ধূমকেতুসহ মহাজাগতিক বস্তুগুলোর গতি বোঝার জন্য একটি গাণিতিক কাঠামো প্রদান করে।
তবে, আসল সাফল্য আসে ১৭ শতকের শেষের দিকে এবং ১৮ শতকের গোড়ার দিকে এডমন্ড হ্যালির কাজের মাধ্যমে। আইজ্যাক নিউটনের মহাকর্ষ এবং গতির সূত্র ব্যবহার করে, হ্যালি বেশ কয়েকটি ধূমকেতুর কক্ষপথ গণনা করেন এবং বুঝতে পারেন যে ১৫৩১, ১৬০৭ এবং ১৬৮২ সালে পরিলক্ষিত ধূমকেতুগুলো আসলে একই বস্তু ছিল, যা এখন হ্যালির ধূমকেতু নামে পরিচিত। তিনি ১৭৫৮ সালে এর প্রত্যাবর্তনের ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, একটি ভবিষ্যদ্বাণী যা পূর্ণ হয়েছিল, নিউটনের মহাকর্ষ তত্ত্বকে দৃঢ় করে এবং ধূমকেতুর কক্ষপথ সম্পর্কে আমাদের ধারণায় বিপ্লব ঘটিয়েছিল। এটি ধূমকেতুকে অপ্রত্যাশিত লক্ষণ হিসেবে দেখা থেকে অনুমানযোগ্য মহাজাগতিক বস্তু হিসেবে বোঝার দিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত চিহ্নিত করে।
আধুনিক যুগ: ধূমকেতু আবিষ্কারে প্রযুক্তিগত অগ্রগতি
২০ এবং ২১ শতকে টেলিস্কোপ এবং মহাকাশ-ভিত্তিক পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রগুলোর প্রযুক্তিগত অগ্রগতির কারণে ধূমকেতু আবিষ্কারে একটি অসাধারণ বৃদ্ধি ঘটেছে।
টেলিস্কোপ এবং সমীক্ষা
ক্রমবর্ধমান সংবেদনশীল ডিটেক্টর এবং স্বয়ংক্রিয় স্ক্যানিং সিস্টেম দিয়ে সজ্জিত ভূমি-ভিত্তিক টেলিস্কোপগুলো নতুন ধূমকেতু শনাক্ত করার জন্য সহায়ক হয়ে উঠেছে। প্রধান জ্যোতির্বিদ্যা সমীক্ষা যেমন:
- LINEAR (Lincoln Near-Earth Asteroid Research): প্রাথমিকভাবে নিকট-পৃথিবী গ্রহাণু শনাক্ত করার জন্য ডিজাইন করা হলেও, LINEAR একটি উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ধূমকেতুও আবিষ্কার করেছে।
- NEAT (Near-Earth Asteroid Tracking): নিকট-পৃথিবী বস্তুগুলোর উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ আরেকটি সমীক্ষা, NEAT ধূমকেতু আবিষ্কারে যথেষ্ট অবদান রেখেছে।
- Pan-STARRS (Panoramic Survey Telescope and Rapid Response System): Pan-STARRS আকাশকে দ্রুত স্ক্যান করার জন্য একটি ওয়াইড-ফিল্ড টেলিস্কোপ ব্যবহার করে, যা ধূমকেতুসহ ম্লান এবং দ্রুতগামী বস্তু শনাক্ত করতে সক্ষম করে।
- ATLAS (Asteroid Terrestrial-impact Last Alert System): সম্ভাব্য পৃথিবী-প্রভাবকারী গ্রহাণু সম্পর্কে প্রাথমিক সতর্কতা প্রদানের জন্য ডিজাইন করা, ATLAS তার পর্যবেক্ষণের সময় ধূমকেতুও আবিষ্কার করে।
এই সমীক্ষাগুলো বিপুল পরিমাণ ডেটা বিশ্লেষণ করতে এবং সম্ভাব্য ধূমকেতু প্রার্থী শনাক্ত করতে অত্যাধুনিক সফ্টওয়্যার অ্যালগরিদম ব্যবহার করে। আবিষ্কার প্রক্রিয়ায় সাধারণত একটি বস্তুকে বেশ কয়েক রাত ধরে পর্যবেক্ষণ করা হয় যাতে তার কক্ষপথ নির্ধারণ করা যায় এবং তার ধূমকেতু প্রকৃতি নিশ্চিত করা যায়। ধূমকেতু তাদের বৈশিষ্ট্যপূর্ণ বিচ্ছুরিত চেহারা দ্বারা চিহ্নিত করা হয়, প্রায়শই একটি কোমা (নিউক্লিয়াসের চারপাশে একটি ঝাপসা বায়ুমণ্ডল) এবং কখনও কখনও একটি লেজ প্রদর্শন করে।
মহাকাশ-ভিত্তিক পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র
মহাকাশ-ভিত্তিক টেলিস্কোপগুলো ভূমি-ভিত্তিক পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রগুলোর তুলনায় একটি উল্লেখযোগ্য সুবিধা প্রদান করে, কারণ তারা বায়ুমণ্ডলীয় বিকৃতি দ্বারা প্রভাবিত হয় না এবং আলোর এমন তরঙ্গদৈর্ঘ্যে পর্যবেক্ষণ করতে পারে যা পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল দ্বারা শোষিত হয়, যেমন অতিবেগুনী এবং ইনফ্রারেড। ধূমকেতু গবেষণায় অবদান রাখা উল্লেখযোগ্য মহাকাশ-ভিত্তিক পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রগুলোর মধ্যে রয়েছে:
- SOHO (Solar and Heliospheric Observatory): SOHO, প্রাথমিকভাবে সূর্য অধ্যয়নের জন্য ডিজাইন করা, ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি ধূমকেতু আবিষ্কারক হয়ে উঠেছে। এর LASCO (Large Angle and Spectrometric Coronagraph) যন্ত্র সূর্যের উজ্জ্বল চাকতিকে अवरुद्ध করে, যা এটিকে সূর্যের কাছাকাছি যাওয়া ম্লান ধূমকেতু শনাক্ত করতে দেয়, যা সানগ্রেজিং ধূমকেতু নামে পরিচিত। এই ধূমকেতুগুলোর মধ্যে অনেকেই বৃহত্তর ধূমকেতুর খণ্ডাংশ যা জোয়ারের শক্তির কারণে ভেঙে গেছে।
- NEOWISE (Near-Earth Object Wide-field Infrared Survey Explorer): NEOWISE একটি মহাকাশ-ভিত্তিক ইনফ্রারেড টেলিস্কোপ যা গ্রহাণু এবং ধূমকেতু দ্বারা নির্গত তাপ শনাক্ত করে। এটি ধূমকেতু আবিষ্কার এবং চরিত্রায়নে সহায়ক হয়েছে, বিশেষত যেগুলোকে ভূমি থেকে পর্যবেক্ষণ করা কঠিন। ২০২০ সালে এই প্রকল্পের একটি উল্লেখযোগ্য আবিষ্কার ছিল C/2020 F3 (NEOWISE) ধূমকেতু, যা খালি চোখে দৃশ্যমান হয়েছিল।
- হাবল স্পেস টেলিস্কোপ: যদিও প্রাথমিকভাবে ধূমকেতু আবিষ্কারের জন্য ডিজাইন করা হয়নি, হাবল স্পেস টেলিস্কোপ ধূমকেতুর নিউক্লিয়াস এবং কোমার অমূল্য উচ্চ-রেজোলিউশনের ছবি প্রদান করেছে, যা বিজ্ঞানীদের তাদের গঠন এবং গঠন বিস্তারিতভাবে অধ্যয়ন করতে দেয়।
রোসেটা মিশন: একটি যুগান্তকারী সাক্ষাৎ
ধূমকেতু অন্বেষণে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলকগুলোর মধ্যে একটি ছিল ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থার (ESA) রোসেটা মিশন। রোসেটা ২০০৪ সালে উৎক্ষেপণ করা হয়েছিল এবং ২০১৪ সালে ধূমকেতু 67P/Churyumov-Gerasimenko-তে পৌঁছেছিল। এটি দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে ধূমকেতুকে প্রদক্ষিণ করে, এর নিউক্লিয়াস, কোমা এবং লেজকে অভূতপূর্ব বিস্তারিতভাবে অধ্যয়ন করে। এই মিশনে ফিলি ল্যান্ডারও অন্তর্ভুক্ত ছিল, যা সফলভাবে ধূমকেতুর পৃষ্ঠে অবতরণ করে, একটি ধূমকেতুর নিউক্লিয়াসের প্রথম-সর্বদা কাছ থেকে পর্যবেক্ষণ প্রদান করে। যদিও ফিলি-র অবতরণ নিখুঁত ছিল না, তবুও এটি মূল্যবান ডেটা সংগ্রহ করেছিল।
রোসেটা মিশন ধূমকেতুর গঠন সম্পর্কে প্রচুর তথ্য প্রদান করেছে, অ্যামিনো অ্যাসিডসহ জৈব অণুর উপস্থিতি প্রকাশ করেছে, যা জীবনের বিল্ডিং ব্লক। এই অনুসন্ধানগুলো এই তত্ত্বকে সমর্থন করে যে ধূমকেতু প্রারম্ভিক পৃথিবীতে জল এবং জৈব পদার্থ সরবরাহ করতে একটি ভূমিকা পালন করতে পারে, যা জীবনের উৎপত্তিতে অবদান রাখে।
অপেশাদার জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা: ধূমকেতু শিকারে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা
যদিও অত্যাধুনিক টেলিস্কোপে অ্যাক্সেস সহ পেশাদার জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা বেশিরভাগ ধূমকেতু অনুসন্ধান পরিচালনা করেন, অপেশাদার জ্যোতির্বিজ্ঞানীরাও ধূমকেতু আবিষ্কারে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। বিশ্বজুড়ে নিবেদিত অপেশাদার জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা তাদের টেলিস্কোপ দিয়ে আকাশ স্ক্যান করে নতুন ধূমকেতু খোঁজার জন্য অগণিত ঘন্টা ব্যয় করেন। অনেক ধূমকেতু অপেশাদার জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের দ্বারা আবিষ্কৃত হয়েছে, প্রায়শই তুলনামূলকভাবে সাধারণ সরঞ্জাম ব্যবহার করে।
ইন্টারনেট অপেশাদার জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের মধ্যে সহযোগিতাকেও সহজতর করেছে, যা তাদের পর্যবেক্ষণ ভাগ করে নিতে এবং তাদের অনুসন্ধান সমন্বয় করতে দেয়। অনলাইন ফোরাম এবং মেইলিং তালিকা অপেশাদার জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের সম্ভাব্য ধূমকেতু দর্শন নিয়ে আলোচনা করতে এবং তাদের আবিষ্কার নিশ্চিত করার জন্য একটি প্ল্যাটফর্ম প্রদান করে। ধূমকেতু হেল-বপের মতো বেশ কিছু সুপরিচিত ধূমকেতু অপেশাদার জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের দ্বারা সহ-আবিষ্কৃত হয়েছিল।
নামকরণের নিয়ম: একটি ধূমকেতুর পরিচয়
ধূমকেতু সাধারণত তাদের আবিষ্কারকদের নামে নামকরণ করা হয়, সর্বাধিক তিনজন স্বাধীন আবিষ্কারক পর্যন্ত। নামকরণের নিয়মে ধূমকেতুর ধরন নির্দেশক একটি উপসর্গও অন্তর্ভুক্ত থাকে, তারপরে আবিষ্কারের বছর এবং একটি অক্ষর এবং সংখ্যা যা সেই বছরের মধ্যে আবিষ্কারের ক্রম নির্দেশ করে। ব্যবহৃত উপসর্গগুলো হলো:
- P/: পর্যায়ক্রমিক ধূমকেতু (কক্ষপথের সময়কাল ২০০ বছরের কম বা একাধিক পেরিহিলিয়ন অতিক্রমণে পরিলক্ষিত)।
- C/: অপর্যায়ক্রমিক ধূমকেতু (কক্ষপথের সময়কাল ২০০ বছরের বেশি বা এখনও নির্ধারিত হয়নি)।
- X/: ধূমকেতু যার জন্য একটি নির্ভরযোগ্য কক্ষপথ নির্ধারণ করা যায়নি।
- D/: ধূমকেতু যা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে, হারিয়ে গেছে, বা আর বিদ্যমান নেই।
- I/: আন্তঃনাক্ষত্রিক বস্তু।
- A/: একটি বস্তু যা প্রাথমিকভাবে একটি ধূমকেতু হিসাবে শ্রেণীবদ্ধ করা হয়েছিল, কিন্তু পরে একটি গ্রহাণু হিসাবে পাওয়া গেছে।
উদাহরণস্বরূপ, ধূমকেতু হেল-বপ আনুষ্ঠানিকভাবে C/1995 O1 হিসাবে नामित, যা নির্দেশ করে যে এটি ১৯৯৫ সালে আবিষ্কৃত একটি অপর্যায়ক্রমিক ধূমকেতু এবং সেই বছরের দ্বিতীয়ার্ধে (O) আবিষ্কৃত প্রথম ধূমকেতু ছিল। হ্যালির ধূমকেতু 1P/Halley হিসাবে नामित, যা নির্দেশ করে যে এটি একটি পর্যায়ক্রমিক ধূমকেতু এবং এটি শনাক্ত হওয়া প্রথম পর্যায়ক্রমিক ধূমকেতু ছিল।
ধূমকেতু আবিষ্কারের ভবিষ্যৎ: সামনে কী আছে?
ধূমকেতু আবিষ্কারের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল, অসংখ্য চলমান এবং পরিকল্পিত প্রকল্প আমাদের এই আকর্ষণীয় বস্তুগুলো সম্পর্কে জ্ঞান প্রসারিত করতে প্রস্তুত। বৃহত্তর এবং আরও শক্তিশালী টেলিস্কোপের উন্নয়ন, ভূমি-ভিত্তিক এবং মহাকাশ-ভিত্তিক উভয়ই, ম্লান এবং আরও দূরবর্তী ধূমকেতু শনাক্ত করতে সক্ষম করবে। মেশিন লার্নিং এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসহ উন্নত ডেটা বিশ্লেষণ কৌশলগুলোও বিশাল ডেটাসেট থেকে ধূমকেতু প্রার্থী শনাক্ত করতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
ধূমকেতুতে ভবিষ্যতের মহাকাশ মিশনও পরিকল্পনা করা হয়েছে, যা তাদের গঠন, কাঠামো এবং বিবর্তন সম্পর্কে আরও বিস্তারিত তথ্য প্রদান করবে। এই মিশনগুলো আমাদের ধূমকেতুর উৎপত্তি এবং সৌরজগতের ইতিহাসে তাদের ভূমিকা সম্পর্কে মৌলিক প্রশ্নের উত্তর দিতে সাহায্য করবে। চিলিতে বর্তমানে নির্মাণাধীন ভেরা সি. রুবিন অবজারভেটরি সৌরজগত সম্পর্কে আমাদের বোঝাপড়াকে, ধূমকেতু আবিষ্কারসহ, বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে বলে আশা করা হচ্ছে।
ধূমকেতু আবিষ্কারের তাৎপর্য
ধূমকেতু আবিষ্কার কেবল একাডেমিক অনুশীলন নয়; সৌরজগত এবং এর মধ্যে আমাদের স্থান সম্পর্কে আমাদের বোঝার জন্য এর গভীর প্রভাব রয়েছে।
- সৌরজগতের গঠন বোঝা: ধূমকেতু হলো প্রারম্ভিক সৌরজগতের অবশেষ, যা এর গঠনের সময় প্রচলিত পরিস্থিতি সম্পর্কে মূল্যবান সূত্র প্রদান করে। তাদের গঠন এবং কাঠামো অধ্যয়ন করা আমাদের গ্রহগুলোর বিল্ডিং ব্লক পুনর্গঠন করতে এবং সৌরজগত কীভাবে বিকশিত হয়েছে তা বুঝতে সাহায্য করতে পারে।
- জীবনের উৎপত্তি: যেমন আগে উল্লেখ করা হয়েছে, ধূমকেতু প্রারম্ভিক পৃথিবীতে জল এবং জৈব পদার্থ সরবরাহ করতে একটি ভূমিকা পালন করতে পারে, যা জীবনের উৎপত্তিতে অবদান রাখে। ধূমকেতুতে জৈব অণুর আবিষ্কার এই তত্ত্বকে সমর্থন করে।
- গ্রহ প্রতিরক্ষা: কিছু ধূমকেতু পৃথিবীর জন্য একটি সম্ভাব্য হুমকি সৃষ্টি করে। নিকট-পৃথিবী ধূমকেতু শনাক্ত করা এবং ট্র্যাক করা গ্রহ প্রতিরক্ষা প্রচেষ্টার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রাথমিক সতর্কতা ব্যবস্থা সম্ভাব্য প্রভাবের জন্য প্রস্তুতি নিতে এবং প্রশমন কৌশল বিকাশের জন্য সময় সরবরাহ করতে পারে।
- বৈজ্ঞানিক অগ্রগতি: ধূমকেতু গবেষণা জ্যোতির্বিজ্ঞান, জ্যোতিঃপদার্থবিজ্ঞান, মহাকাশ প্রযুক্তি এবং পদার্থ বিজ্ঞানসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে উদ্ভাবন চালনা করে।
উপসংহার: একটি চলমান অন্বেষণ
ধূমকেতুর আবিষ্কার একটি চলমান অন্বেষণ, যা মানুষের কৌতূহল এবং মহাবিশ্বে আমাদের স্থান বোঝার আকাঙ্ক্ষা দ্বারা চালিত। প্রাচীন পর্যবেক্ষণ থেকে আধুনিক প্রযুক্তিগত বিস্ময় পর্যন্ত, ধূমকেতু সম্পর্কে আমাদের বোঝাপড়া নাটকীয়ভাবে বিকশিত হয়েছে। আমরা যেমন সৌরজগত অন্বেষণ চালিয়ে যাচ্ছি এবং নতুন প্রযুক্তি বিকাশ করছি, আমরা আগামী বছরগুলোতে আরও উত্তেজনাপূর্ণ ধূমকেতু আবিষ্কারের আশা করতে পারি। এই আবিষ্কারগুলো নিঃসন্দেহে আমাদের সৌরজগতের উৎপত্তি, পৃথিবীর বাইরে জীবনের সম্ভাবনা এবং মহাজাগতিক বস্তু দ্বারা সৃষ্ট ঝুঁকিগুলোর উপর আরও আলোকপাত করবে।
ধূমকেতুর চলমান অন্বেষণ বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানের শক্তি এবং মহাবিশ্বের স্থায়ী আকর্ষণের একটি প্রমাণ। পরের বার যখন আপনি রাতের আকাশে একটি ধূমকেতুকে ছুটে যেতে দেখবেন, তখন পর্যবেক্ষণ, আবিষ্কার এবং বৈজ্ঞানিক অগ্রগতির দীর্ঘ ইতিহাস মনে রাখবেন যা আমাদের মহাকাশের এই বরফময় পরিব্রাজকদের বুঝতে দিয়েছে।
আরও পড়ুন
- "Comets: Nature, Dynamics, Origin, and Their Cosmogonical Relevance" by Hans Rickman
- "Cometography: A Catalog of Comets" by Gary W. Kronk
- ESA Rosetta Mission website: [https://www.esa.int/Science_Exploration/Space_Science/Rosetta](https://www.esa.int/Science_Exploration/Space_Science/Rosetta)